মতলব উত্তর প্রতিনিধি:চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর বাজারে মুজিবুর রহমান নামে এক ভুয়া চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় জহিরুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবক গুরুতর জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এলার্জির চিকিৎসার কথা বলে অতিরিক্ত ইনজেকশন প্রদানের ফলে ভুক্তভোগী এখন মারাত্মক শারীরিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে চিকিৎসকরা জানান, ভুল চিকিৎসার কারণে তার দেহে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
অভিযোগে জানা যায়, ছেংগারচর পৌরসভার জোরখালী গ্রামের মৃত আজিজ সরকারের ছেলে মুজিবুর রহমান (৫০) ‘ব্রাদার্স ফার্মেসি’ নামে ওষুধের দোকান পরিচালনা করেন। কোনো মেডিকেল ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রোগী দেখছেন এবং অনুমোদনহীন বিদেশি ওষুধ বিক্রি করছেন।
গত জুলাই মাসের শুরুতে জহিরুল ইসলাম তার এলার্জি রোগ দেখাতে গেলে মুজিব নিজ দোকানে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে একসাথে ৩২টি ইনজেকশন পায়ে প্রয়োগ করেন। এতে তাৎক্ষণিক ব্যথা ও জটিলতা দেখা দিলে তিনি ৪৫০০ টাকা বিল করেন। জহিরুল ইসলাম ২ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু দুই দিনের মাথায় তার পায়ে মারাত্মক পচন, প্রদাহ ও অ্যালার্জি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বলেন—
“আমি আপত্তি জানালে সে বলে—‘জোয়ান পুরুষ হয়ে ভয় পাও কেন?’ ইনজেকশন দেওয়ার পর অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে বললে উল্টো গালাগাল ও হুমকি দেয়। বাকি ২৫০০ টাকা চাইতে থাকে এবং বিষয়টি কাউকে না বলতে ভয় দেখায়।”
পরবর্তীতে জহিরুল ইসলাম ঢাকায় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা নিলে ডাক্তার তাকে ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন। বিষয়টি জানিয়ে গত ২৭ জুলাই তিনি মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই মাসেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, হাড়ভাঙা, রগের ব্যথা, যৌনব্যাধি, জরায়ুর রোগ, এমনকি ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও তিনি চিকিৎসা করেন বলে প্রচার চালান। তার অপচিকিৎসায় এলাকার বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন—
“অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি জানান—
“অভিযোগ পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত মুজিবুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে এই ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।